জীবন যুদ্ধ
- অন্বেষা পাল ১৯-০৫-২০২৪

"ওঠরে খোকা, সকাল তো হল, মুখটা ধুয়ে পড়তে বস,
ঘরে বসে দেখ পড়ছে সবাই, না পড়লে তোরই লস্–
সময়টা পেয়েছিস যেমন,পড়ে'নে বাবা ভালো করে,
তোর পেছনে চেঁচিয়ে গলাটা আমার গেল ধরে,
ওঠ জলদি –"

খোকা বলে,"পাঁচটা মিনিট শুলে,পড়ে করবোনা আমি ফেল–
চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে আমার লাইফটা করোনা তুমি হেল",
অবাক হয়ে চেয়ে থাকি খোকার দিকে, নিস্তব্ধ নিশ্চুপ–
নরক তো হয়েছে বিশ্ব আজ, হয়ে উঠেছে অন্ধকার কূপ,
শান্ত গলায় বলি ছেলেকে,"লড়বি না তুই দেশের হয়ে?
মানুষ যে আজ অসহায় খুব , গৃহবন্দী এক ভাইরাসের ভয়ে–
লড়বি না খোকা দেশের হয়ে?"

ছোট্ট ছেলে, চোখটা খুলে, এক পলকে বসলো কোলে–
জড়িয়ে ধরে বললো আমায়, "তারা কি আমায় নেবে দলে?"
জিজ্ঞেস করলাম,"কার কথা বলছিস বাবা, বুঝতে তো ঠিক পারলাম না?"
সে বলে," ওই যে মা সবাই যাদের করছে এত বন্দনা,
বাবাও তো মা কতদিন হলো, ঘ‍রে কেন আসেনা?
রাগ করেছে মা আমার ওপর? একটু বুঝিয়ে বলোনা–"
হেসে বলি,"বোকা ছেলের কথা শোনো, তোর বাবা আজ ব্যস্ত খুব,
দেশের স্বার্থে সে ভুলেছে আমাদের, দিয়েছে এক গভীর ডুব।"

ছেলে বলে,"কাল দেখলাম এক বুড়ি মা'কে, পড়ে থাকতে ফুটের ধারে–
পথের মানুষ যায় ও আসে, কেন কেউ ছ়ুঁয়েও দেখেনা তারে?"
বুঝতে পারি, ভাইরাস শুধু ছড়ায়নি সারা অঙ্গে;
ছোট্ট ছেলের হাজারো প্রশ্ন সে নিয়ে এসেছে সঙ্গে।
আজ যেন সব একই রূপে, একই সূত্রে বাঁধা–
বুঝবেনা। কেউ আসল নকল, কে বা মানুষ আর কে বা গাধা।
"কোন ওষুধে সারবে গো মা, উপায় তুমি বলে দাও?"
চোখের জল মুছে রাগস্বরে বলি, "জলদি এবার পড়তে যাও।"
উদাস মুখে যায় সে চলে, আমি শুধু বসে ভাবি–
দেশের স্বার্থে তুইও হয়তো, তোর বাবার মতন চলে যাবি।।

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 0টি মন্তব্য এসেছে।